যে কারণে হয় ডায়রিয়া
যে কারণে হয় ডায়রিয়া:ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর মধ্যে রয়েছে নরোভাইরাস,অ্যাস্ট্রোভাইরাস,এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস ,ভাইরার হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভাইরাস
বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ডায়রিয়া রোগের ভয়াবহ
রূপ নতুন নয়।কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডায়রিয়া সংক্রমন দেশজুড়ে শষ্কার সৃষ্টি করছে
।আইসিডিডিআরবি(আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র,বাংলাদেশ)-এর তথ্যানুসারে
,বিগত নয় দিনে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ১১হাজার ১৬১ জন।
কর্মকর্তাদের দাবি ,প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছরের ইতিহাসে রোগীর এমন চাপ নজিরবিহিন
।এমনকি হাসপাতালের বাইরেও তাঁবু টানিয়ে চিকিৎসা চলছে।বিশুদ্ধ পানির যথেষ্ট
যোগান না থাকায় এবং অতি ব্যস্ততার ফলে বাসি খাবারের উপর নির্ভরশীলতা ডায়রিয়ার সংক্রমণ
বাড়াচ্ছে।এমন সংকটাপন্ন সময়ে সতর্ক থাকতে চলুন ডায়রিয়া রোগের ব্যাপারে বিশদ জেনে নেওয়া যাক।
কী কী কারণে ডায়রিয়া হয়-
ভাইরাস: ডায়রিয়া সংক্রমণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা ভাইরাসগুলোর
মধ্যে রয়েছে নরোভাইরাস,অ্যাস্ট্রোভাইরাস,এন্টারিক অ্যাডেনোভাইরাস,
ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং সাইটোমেগালোভঅইরাস।রোটাভাইরাস বাচ্চাদের ডায়রিয়ার তীব্রতার জন্য দায়ী
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসও ডায়রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করে।দূষিত পানি নরোভাইরাস
,অ্যাস্ট্রোভাইরাস,হেপাটাইটিস এ ভাইরাস,এবং স্যাপোভাইরাসের একটি বড় উৎস।হিমায়িত সবজি হেপাটাইটিস
এ ভাইরাসের বড় উৎস।নোরেভাইরাস থাকে পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজিএবং তাজা ফলের মধ্যে।হেপাটাইটিস এ
এবং নোরেভাইরাস সংক্রমন অনুপযুক্ত খাদ্য পরিচালনার মাধ্যমেও হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী : দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ই কোলাইয়ের মত প্যাথোজেনিক ব্যকিটেরিয়া
বা পরজীবী সংস্পর্শে আসার ফলে ডায়রিয়া হয়।দূষিত পানি ছাড়াও ই কোলাই কাঁচা বা কম রান্না করা গরুর মাংস,কাঁচা শাকসবজি
এবং পাস্তুরিত দুধে থাকে।যে কারণে হয় ডায়রিয়া যে কারণে হয় ডায়রিয়া
ওষুধ সেবন: কিছু অ্যান্টিবাযোটিক আছে যেগুলো দেহের খারাপ ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার পাশাপাশি ভালো ব্যাকটেরিয়ারও মেরে ফেলে।
ফলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে,যা পুরো শারীরিক অবস্থাকে ডাযরিয়ার দিকে ধাবিত করে।
এছাড়াও অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড ডায়রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
ল্যাকটোজ সমস্যা: ল্যাকটোজ হল দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া এক ধরনের চিনি
।যাদের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা হয় তাদের দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পর ডায়রিয়া হয়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাটি বাড়তে পারে,কারণ যে
এনজাইমটি ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মাত্রা কমতে থাকে।
ডায়রিয়ার লক্ষণসমূহ:
ডায়রিয়ার প্রধান উপসর্গগুলো হল মলত্যাগের জন্য প্রচণ্ড চাপ অনুভূত হওয়া, এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা।
এছাড়াও বমি বমি ভাব ,পেটে ব্যথা পেটে চাপ অনুভূত হওয়া ,পেট ফোলা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অবস্থায় ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়।
ডায়রিয়ার গুরুত্বর জটিলতা হল পানি শূন্যতা।ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় তরলের একটি বিশাল অংশ বেরিয়ে যায়।
আর এর ফলেই পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে।পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো প্রচণ্ড ক্লান্তি,শুকনো শ্লেষ্মা,হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি,মাথাব্যথা ,তৃষ্ণা বৃদ্ধি,প্রস্রাব হ্র্রাস এবং শুষ্ক মুখ।
বাচ্চারা ডাযরিযা এবং পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে বেশ সংবেদনশীল
এ সময় বাচ্চাদের প্রস্রাব কমে যায়,মুখ শুকিয়ে যায়,মাথাব্যথা হয় ক্লান্ত দেখায় ,কান্নার সময় চোখে পানি থাকেনা
চোখ আধাবোজা-আধখোলা অবস্থায় থাকে ,তন্দ্রাতুর দেখায় এবং সবসময় বিরক্ত থাকে।যে কারণে হয় ডায়রিয়া
ডায়রিয়া হলে করণীয় :
সাধারণ অবস্থায় ডায়রিয়া কয়েক দিনের মধ্যে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যেতে পারে।শরীর খারাপের সময়টুকু বিশ্রামের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানীয় পান করতে হয় এবং অন্যান্য খাবারের সময় সতর্ক থাকতে হয়।
শরীরকে পানিপূর্ণ রাখার জন্য পরিষ্কার তরল পান ও ফলের রস খেতে হবে। এ সময় দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।একবারে টান দিয়ে পুরো গলাধঃকরণের পরিবর্তে অল্প
পরিমাণে চুমুক দিয়ে পান করা যেতে পারে।যে কারণে হয় ডায়রিয়া যে কারণে হয় ডায়রিয়া
ডায়রিয়া হলে দেহকে পানিপূর্ণ রাখতে ডাক্তার লবণ, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইড-এর মত স্পোর্টস পানীয়গুলো পানের পরামর্শ দিতে পারে।
ঘন ঘন বমি বমি ভাব হলে ধীরে ধীরে তরলে চুমুক দিয়ে পান করা ভালো।এ সময়ের জন্য উপযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু,চিনাবাদামের মাখন,টার্কির মাংস এবং দই।
যে খাবারগুলো ডায়রিয়া বা শরীরে গ্যাসের অবস্থা আরও খারাপ করে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।এগুলোর মধ্যে আছে চর্বিযুক্ত
বা ভাজা খাবার ,কাঁচা ফল এবং শাকসবজি,মশলাদার খাবার,মটরশুঁটি এবং বাঁধাকপি এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়,যেমন কফি ও সোডা।
যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসা:
ছাড়াই শরীর উন্নতির দিকে যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়।যদি উপসর্গ ২ দিনের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে,তখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এর্ব তাৎক্ষনিকভাবে জরুরি অবস্থা গ্রহন করতে হবে।এগুলো-অবিরাম বমি,ক্রমাগত ডায়রিয়া,পানিশূন্যতা,উল্লেখযোগ্য হারে ওজন হ্রাস,মলের মধ্যে পুঁজ ও রক্ত,কালো মল বের হওয়া ইত্যাদি।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলো অবিলম্বে চিকিৎসার দাবি রাখে সেগুলো হলো-২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া ,জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি,রক্ত ও পুঁজ মল এবং কালো মল।
ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনে ডায়রিয়া হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়েটিক সেবনের কথা বলতে পারেন।অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে ডাক্তার রোগীর কিছু শারীরিক অবস্থা নিরীক্ষা করবেন।সেগুলো হলো- ডায়রিয়া তীব্রতা,পানিশূন্যতার তীব্রতা রোগীর স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা,চিকিৎসা ইতিহাস,এবং রোগীর বিভিন্ন পদ্ধতি বা ওষুধ সহ্য করার ক্ষমতা।যে কারণে হয় ডায়রিয়া