জন্ডিস (ইংরেজি : jaundice) যা ইক্টেরাস (ictrus) এটি নামেও পরিচিত,[১] আসলে কোন রোগ নয় ,এটি রোগের লক্ষণ মাত্র।জন্ডিস হলে রক্তে বিলরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে ত্বক,স্কলের বা চোখের সাদা অংশ ও অন্যন্য মিউকাস ঝিল্লি হলুদ হয়ে যায়।[২]
রক্তে বিলরুবিনের ঘনত্ব (1 .2 mg/dL এর নিচে থাকে (25 pmol/এর নিচে)।3 mg/dL বা 50 pmol/L এর বেশি হলে জন্ডিস হয়।[৩] jaundice শব্দটি ফরাসি শব্দ jaunisse, থেকে এসেছে যার অর্থ হলুদাভ।রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়।আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভার প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিওরসের সাথে পিওনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে।অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীরে থেকে বেরিয়ে যায়।বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস ।এই রোগে চামড়া পাণডুর বা ফ্যাকাশে দেখায় বলে একে আগে পাণডুরোগ বলা হত। [৪]
উৎসর্গ
জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়।[৫] তবে হেপাটাইটিস রোগে জন্ডিসের পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা,অরুচি ,বমি ভাব,জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা ,মৃদু বা তীব্র ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।এ সব উপসর্গ দেখা দিলে তাই অবশ্যই একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।চিকিৎসক শারীরিক লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার
মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয়
চিকিৎসার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
এই ভয়ানক প্রচলিত রোগের কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে
আপনাদের জানানো হলো।

কারণ
লিভার রোগ রোগ জন্ডিসের প্রধান কারণ।
আমরা যা কিছুই খাই না কেন তা লিভারে
প্রক্রিয়াজাত হয়।লিভার নানা কারণে
রোগাক্রান্ত হতে পারে।হেপাটাইটিস
এ,বি,সি,ডিিএবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে
প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় ভাইরাল
হেপাটাইটিস।আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই
জন্ডিসের প্রধান কারণ এই হেপাটাইটিস
ভাইরাসগুলো।তবে উন্নত দেশগুলোতে
অতিরিক্ত মধ্যপান জন্ডিসেরিএকটি
অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অটোইমিউন
লিভার ডিজিজ এবং বংশগত কারণসহ
আরও কিছু অপেক্ষাকৃত বিরল ধরনের
লিভার রোগেও জন্ডিস হতে পারে ।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও অনেক সময়
জন্ডিস হয়।তা ছাড়া থ্যালাসিমিয়া ও
হিমোগ্বোবিন ই-ডিজিজের মত যে
সমস্ত রোগে রক্ত।ভেঙ্গে যায় কিংবা
পিওনালীর পাথর বা টিউমার এবং
লিভার বা অন্য কোথাও ক্যান্সার হলেও
জন্ডিস হতে পারে ।তাই জন্ডিস মানেই
লিভারের রোগ এমনটি ভাবা ঠিক নয়।
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে
জন্ডিস দেখা দেয়।এই ঘটনার প্রেক্ষিতে
যেসব কারণ জানা গেছে তা জেনে নিই।
১.লিভার প্রদাহ :লিভার প্রদাহে বিলিরুবিনের
উৎপাদন বেড়ে যায়।ফলশ্রুতিতে রক্তে
বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জন্ডিস
সৃস্টি হয়।২. পিওনালীর প্রদাহ: পিওনালীর
প্রদাহে বিলিরুবিন শোষণ ব্যাহত হয়।
ফলে বিলরুবিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩. পিওনালীর ব্লকঃ পিওনালীতে ব্লক
হলে লিভার বিলিরুবিন সরাতে ব্যর্থ হয়।
বেড়ে যায় জন্ডিসের সম্ভাবনা।৪. গিলবার্ট’স
সিনড্রোম :এই অবস্থায়।এনজাইমের কার্যক্ষমতা
কমে যায়। এর ফলে পিওের রেচনতন্ত্রে সমস্যা
হয় এবং বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।৫. ডুবিন-
জনসন সিনড্রেম: এই বংশগত রোগে লিভার থেকে
বিলিরুবিন শোষন হতে বাধাঁ দেয়।
ফলশ্রুতিতে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
প্রতিরোধ
চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করে ঠিক কি কারণে
জন্ডিস হলো তার উপর।তবে জন্ডিসথেকে বেঁচে
থাকতে আমাদের কিছু করণীয় আছে।জন্ডিস
প্রতিরোধে সে সম্পর্ক জেনে নেওয়া দরকার।
১.হেপাটাইটিস -এ ও ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে
সংক্রমিত হয়।আর বি,সি এবং ডি দৃষিত রক্ত ,
সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক
সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।তাই সব সময় বিশুদ্ধ
খাদ্য ও পানি খেতে হবে।শরীরে রক্ত নেওয়া
দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং
করে নিতে হবে।ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ
ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরী।২. মদ্য পান
থেকে বিরত থাকুন।৩. কল কারখানার
রাসায়নিক পদার্থ থেকে দৃরে থাকুন।
৪.নেশাদ্রব্য গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন।
৫.ব্যবহারকৃত ইনজেকশন কিংবা নাক-কান
ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না ।যারা সেলুনে
সেভ করেন,তাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আগে
ব্যবহার করা ব্লেড বা ক্ষুর আবারো ব্যবহার করা
না হয়।৬. নিরাপদ যৌনমিলন করুন।
৭. হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশস্কা মুক্ত
থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর ভ্যাকসিন
গ্রহণ করুন।জন্ডিস অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর
কারণ হতে পারে ।তাই এই রোগ থেকে বাঁচেতে
হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

তথ্যসূএ
১.”Definition of Icterus । Meicienet.com।
২০১১।৭ আগষ্ট ২০১২ তারিখে মৃল থেকে আর্কাইভ
করা।সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
২.ClicK,RacheL;Dahl;-Smith, Julic;Fowler;
Lindsay;DuboSe,Jacqueline;deneau
Saxton,Margi,Herbert,Jennifer
ডিওআই:10.1016/j.osfP.2012.09.005।
৩. SilBernagl S, Despopoulos A (2009) ।
Color atlas of physiology (6th সংস্করণ) ।
Thieme।পৃষ্ঠা 252 ।আই,এসবিএন ।৪.
২১ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল্য থেকে
আর্কাইড করা।সংগ্রহের তারিখ
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০।
সুস্থ থাকুন চলছে ভ্যাপসা গরম ।এ সময়টায়
জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়ে যায়।
আসুন জেনে নিই জন্ডিস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এর পাশাপাশি প্রসাবের রঙ হালকা থেকে
গাঢ় হলুদ হতে পারে।রক্তে বিলিরুবিন
নামে এক ধরনের পিগমেন্টের মাত্রা
বেড়ে গেলে জন্ডিস খো দেয়।জন্ডিসে
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিভার আক্রান্ত হয়।
আর তাই জন্ডিসকে কখনোই হেলাফেলা
করা উচিত নয়।