ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়:রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস ও শরীরচর্চা ও মানসিক চাপ কমানোর কৌশল একসঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

এই বিষয়ে হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নয়া দিল্লির ”আকাশ হেল্থকেয়ার,য়ের ইন্টারনাল মেডিসিনের

জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. রাকেশ পন্ডিত বলেন,ডায়াবেটিস একটা দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা যেখানে ওষুধের

চেয়ে জীবনযাত্রা ও নিজের পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।”তবে জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আনার আগে

পেশাদার স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।তাহলে ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সুষম খাবার খাওয়া জরুরী।অপ্রক্রিয়অজাত খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি কম

পরিশোধিত শর্করাও কার্বোহাইড্রেইট ধরনের শস্য গ্রহণে সচেতন থাকতে হবে।নানান রকম ফল,সবজি,শস্য,চর্বিহীন মাংস

ও স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া জরুরি।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়সেই সাথে প্রক্রিয়াজাত  খাবার,মিষ্টি পানীয় ওউচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার  এড়িয়ে চলা উপকারী।

এছাড়া খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রক্তের শর্করার  মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

নিয়মিত শরীরচর্চা করা:

ডায়াবেটিকদের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা উপকারী।এতে ইন্সুলিনের সংবেদশীলতা নিয়ন্ত্রণে থাকে,রক্তের শর্করার

মাত্রা কমেে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।সপ্তাহে ১৫০ মিনিট  মাঝারি অ্যারোবিক  ব্যায়াম,যেমন-হাঁটা,সাঁতার কাটা বা সাইকেল

চালানো  উপকারী।এছাড়াও শক্তি বর্ধক ব্যায়াম থেকে শুরু করে পেশি গঠনমূলক  ব্যায়াম সার্বিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ

ওজন বেশি বা স্থুলকায় হলে সামান্যতম ওজন হ্রাস রক্তের শর্করা ও ইন্সুলিনের সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।

স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণে সুষম খাবার ও নিয়মিত শরীরচর্চা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে ।

কার্বোহাইড্রেইট গ্রহনে সতর্কতাঃ

কার্বোহাইড্রেইট সরাসরি রক্তের শর্করার ওপরে প্রভাব ফেলে ।ডায়াবেটিস  নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্বোহাইড্রেইট গ্রহন

নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার যেমন -গোটা শস্য,ডাল,সবজি ও শ্বেতসার কম এমন

সবজির মতো জটিল  কার্বোহাইড্রেইট গ্রহন সারা দিন দেহে  সমানভাবে ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে।পরিমিত খাবার গ্রহন

রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকারী।

চাপ নিয়ন্ত্রণ:

মানসিক চাপ রক্তের শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত  করে যা হরমিানের  প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে গ্লূুকোজের উৎপাদন বাড়ায়।চাপ নিয়ন্ত্রণ কৌশল মেনে চলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহয়তা করে।ধ্যান,গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন,যোগ  ব্যায়াম -সহ পছন্দের শরীচর্চা করা প্রয়োজন।এছাড়াও বিশ্রাম  ও কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আর্দ্র থাকা:

সঠিক আর্দ্রতা  রক্ষা সার্বিক সুস্বাস্থের জন্য জরুরি।পর্যাপ্ত পানি দেহের পানিশূন্যতা কমায়,কিডনি বা বৃক্ক সক্রিয় রাখে ।দিনে কমপক্ষে আট  কাপ পানি  পান করা দেহের  প্রয়োজন মেটাতে ও সক্রিয় রাখতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ:

নিয়মিত চেক-আপ নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ  করুন এবং তার নির্দেশনা মেনে চলুন ।প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন নিন।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন:

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকে বাধা দিতে পারে,তাই স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন,যোগ ব্যায়াম বা পছন্দের কাজ করুন।

পায়ের যত্ন:

ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন বিশেষভাবে নেওয়া উচিত।প্রতিদিন পা ভালেঅভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার  ব্যাবহার করুন এবং ছোটখাটো কাটা বা ফোসকা হলে গুরুত্ব দিন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো:

দূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল  পান থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার:

ডিম ও মাছ -মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে,যা আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে।কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলতে  খাদ্যতালিকা থেকে লাল মাংস (যেমন গরু,খাসি ও ভেড়ার মাংস) ও

প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ,পেপারনি ও সালামি)-এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, কারণ এগুলো  খাওয়ার সাথে ক্যান্সার ও হার্টের রোগে সম্পর্ক পাওয়া গেছে।সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন  তৈলাক্ত মাছে

প্রচুর ওমেগা -৩থাকে,যা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে ।

অন্যান্য প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শিম,বরবটি ও অন্যান্য বীনজাতীয় খাবার,ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম,যারা নিরামিষাশী বা ভেগান খাদ্যভ্যাস মেনে চলেন তাদের জন্য এগুলো

প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।

ডায়াবটিস রোগিরা প্রোটিন সমূদ্ধ খাবার খেতে পারে,প্রয়োজনে সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন মাংসের পরিবর্তে রান্নায়

ডাল বা শিমের বীচি ব্যবহার করতে পারেন ।

ডিম সেদ্ধ,পোচ বা ভাজি -যেভাবে আপনার পছন্দ  সেভাবেই খেতে পারেন কম তেল-মশলায় রান্না ,গ্রিল ও বেক করা মাংস খাওয়া যেতে  পারে।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার:

দুধ,পনির ও দই -এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে,যা আপনার  হাড়,দাঁত ও পেশীয় গঠনের জন্য উপকারী ।কিন্তু কিছু দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি,বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে  দেয়।তাই কম

চর্বিযুক্ত বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া জরুরি ।তবে সেক্ষেত্রে এসব বিকল্প যেন অতিরিক্ত চিনিমুক্ত হয় সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতেহবে।

দুধ ও দুগ্ধজাত  খাবারের উপকারিতা:

হাড় ও দাঁতের  গঠনের জন্য উপকারী আপনার পেশীকে সুস্থ রাখেএক গ্লাস দুধ সরাসরি খেতে পারেন,বা গন্ধ ভালো না লাগলে

এতে অল্প  পরিমাণে দারুচিনি  দিয়ে নিতে পারেন ।ওটস বা নাস্তায়  সিরিয়ালের সাথে মিশিয়েও দুধ খেতে পারেন ।ফল বা তরকারির

সাথে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায়,গাজর ও শসার সাথে পনির খেতে পারেন নাস্তা হিসেবে।সন্ধ্যার নাস্তার সাথে লাচ্ছি,মাঠা বা দই খেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *